ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাস, এর সম্পর্কে জেনে নিন

ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাস, এর সম্পর্কে জেনে নিন



ইবোলা ভাইরাস এখন ছড়িয়ে গেছে সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, গিনি ও নাইজেরিয়াতে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এই তথ্য দিয়েছে। ইতিহাসে রয়েছে, এই ভয়ংকর ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকায় আঘাত হেনে ৭০০ মানুষের জীবননাশ করে। রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে নতুন করে এই ভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডব্লিউএইচও এর প্রধান মার্গারেট চান।




বোস্টন মেডিক্যাল সেন্টারের এপিডেমিওলজিস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইমারজিং ইনফেকশনস ডিজিস ল্যাবরেটরিস এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ড. নাহিদ বাদেলিয়া জানান, কঙ্গোতে যে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায় তার প্রাণনাশের হার ছিলো ৯০ শতাংশ। তবে এখন বিভিন্ন দেশে যে ইবোলা ছড়িয়েছে তা কিছুটা দুর্বল মনে হতে পারে। কিন্তু কোনো প্রকার চিকিৎসা না নিলেই এটি মারাত্মকভাবে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।



এই ভাইরাসটি সত্যিই খুব ভয়ংকর। এর আক্রমণে চোখ, কান ও নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে এবং মৃত্যু নিশ্চিত। ড. বাদেলিয়া এই ভাইরাস সম্পর্কে নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন।



এটি কীভাবে দেহে প্রবেশ করে? ঃ এই ভাইরাস বাতাসের সঙ্গে সংক্রমিত হতে পারে। এ ছাড়া বাদুড়সহ যেকোনো প্রাণী যদি এই ভাইরাস বহন করে তবে তার সংস্পর্শেও এটি সংক্রমিত হতে পারে। দেহে এই ভাইরাস রয়েছে এমন মানুষের দেহের তরল পদার্থ যেমন- বমি বা ডায়রিয়া ইত্যাদির সংস্পর্শেও এর সংক্রমণ ঘটে।

পরিবেশের যেকোনো উপাদানে বিশেষ তাপমাত্রায় এই ভাইরাস এক থেকে দুই দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। তাই সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে ইবোলা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।

সংক্রমণের পর কী হয়? ঃ ইবোলা দেহে সংক্রমিত হলে তা কোষগুলোকে নকল করতে থাকে। এরপর এটি এমন এক প্রোটিন উৎপন্ন করে যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এক বলা হয় ইবোলাভাইরাস গ্লাইকোপ্রোটিন। এটি রক্ত প্রবাহের শিরা-উপশিরায় মিশে যায়। এটি দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং রক্ত পাতলা করে দেয়।

এটি দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এটি কোষের সংকেত যাকে নিউট্রোফিলস বলে, তা ব্লক করে দেয়। এই ভাইরাস বিপাকক্রিয়ায় অংশ নেওয়া কোষের সঙ্গে মিশে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়।



ইবোলার সংক্রমণে দেহে এক ধরনের প্রদাহ দেখা দিতে পারে এবং এটাই এর প্রথম লক্ষণ।


লক্ষণগুলো কেমন? ঃ ফ্লু এর মতো এর প্রাথমিক লক্ষণ। এ ছাড়া নাক দিয়ে বা চোখ দিয়ে রক্ত পড়ার মতো চরম হেমারেজের লক্ষণও প্রকাশ পায়। কিছু মানুষের মধ্যে এর লক্ষণ জোরালভাবে দেখা দেওয়ার আগেই তারা মারা যান। আবার অনেকের সামান্য রক্ত বের হতে পারে।

প্রাথমিক অবস্থায় ফ্লু এর মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়। পুরো অসুস্থ হওয়ার আগে রোগীর বারবার বমি, ডায়রিয়া এবং নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। মূলত দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যু হয় যার পেছনে রয়েছে ইবোলা।



আক্রান্ত মানুষরা কীভাবে বাঁচেন? ঃ আক্রান্ত মানুষরাও বাঁচতে পারেন তার স্বাস্থ্য কেমন তার ওপর ভিত্তি করে। হতে পারে তারা আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু তা নিতান্ত কম। ইবোলাকে দেহের কোষে প্রবেশের জন্য ত্বকের উপরিতলে সুযোগ থাকতে হবে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু মানুষের জিনগতভাবে বৈশিষ্ট্য এমন যে এই ভাইরাস প্রবেশের তেমন সুযোগ থাকে না। সে ক্ষেত্রে তারা ক্ষতিগ্রস্ত নাও হতে পারেন।

ড. বাদেলিয়া জানান, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস থেকে নিরাময়ের উপায় পেতে গবেষণা চালানো হচ্ছে। তারপরও ভাইরাস দেহে প্রবেশের পর একে থামানোর উপায় হলো, এটি কোষের রেপ্লিকা তৈরি শুরুর আগেই তাকে আটকে দেওয়া। অথবা দেহের বিপাক ক্রিয়াকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেনো তা ইবোলাকে আটকে দিতে পারে।

সূত্র ঃ হাফিংটন পোস্ট

►শেয়ার করুন◄

Comments